জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়ম

জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়ম: ক্যারিয়ার সামারি লেখার নিয়ম (5+ Best Practices)

জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়ম: ক্যারিয়ার সামারি লেখার নিয়ম

 

আপনি যদি আপনার কর্মজীবনে একটি নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই একটি গোছানো জীবনবৃত্তান্ত নিশ্চিত করতে হবে। হতে পারে এই জীবনবৃত্তান্ত আপনার মাথায় গেঁথে আছে বা গোছনো আছে। তবে সাজিয়ে নেননি, এ-নিয়ে কোনো ডকুমেন্টস তৈরি করেননি! আচ্ছা বলুন তো শেষ কবে আপনি এই জীবনবৃত্তান্ত আপডেট করেছেন? বা এটলিষ্ট রেডি করে রেখেছেন? যদি উত্তরটুকু হয় “না” সেক্ষেত্রে চলুন জেনে নেওয়া যাক জীবনবৃত্তান্ত কি এবং জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়ম কি কি হতে পারে সে-সম্পর্কে।
তবে তার আগে বলে রাখি, আপনি যদি সিভির চিন্তায় বুদ হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা দিচ্ছি সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রফেশনাল সিভি তৈরির সেরা সার্ভিস। জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়ম বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

 

সূচিপত্র

  • জীবনবৃত্তান্ত কি? 
  • যতটা সম্ভব একটি পৃষ্ঠায় রাখুন
  • বানান বা ব্যাকরণের ত্রুটি এড়িয়ে চলুন
  • লজিক্যাল স্ট্রাকচারে ফরম্যাট করুন
  • সহজে পড়া যায় এমনভাবে তৈরি করুন
  • সাবধানে আত্মপ্রশংসা করুন
  • ক্যারিয়ার সামারিটি ভালোভাবে সাজিয়ে নিন
  • অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনোকিছু উল্লেখ করবেন না

 

জীবনবৃত্তান্ত কি? 

আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বিশেষ করে ক্যারিয়ার সম্পর্কিত পয়েন্ট দ্বারা সাজানো ডকুমেন্টস পেপারকে সাধারণ জীবনবৃত্তান্ত বলে। যাকে আমরা ইংরেজিতে সিভি হিসাবে চিনি। যদি এটিকে সরাসরি সিভি বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না। কারণ দু’টো বিষয়ই সম্পূর্ণ আলাদা। যারা সিভি বা CV সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তারা আমাদের পূর্বের গাইডলাইন-ভিত্তিক আর্টিকেলটি ফলো করতে পারেন। 

যাইহোক! আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন, বিভিন্ন চাকরির আবেদন ছাড়াও এই জীবনবৃত্তান্ত স্কলারশিপসহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে। সুতরাং হেলা না করে এটি তৈরিতে দ্রুত মনোযোগ দেওয়া উচিত। সুতরাং চলুন জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়ম সম্পর্কিত মূল গাইডলাইনে ফোকাস করা যাক।

 

যতটা সম্ভব একটি পৃষ্ঠায় রাখুন : জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়ম

জীবন বৃত্তান্ত বাংলা ফরমেটে হোক বা ইংরেজি ফরম্যাটে হোক…তা ১ টি মাত্র পৃষ্ঠায় রাখার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, যদি একজন নিয়োগকারী ব্যবস্থাপক আপনার জীবনবৃত্তান্ত দেখতে ছয় সেকেন্ড সময় ব্যয় করেন, সেক্ষেত্রে তিনি হয়তো দ্বিতীয় পৃষ্ঠায়ও যাওয়ার সময় পাবেন না! তাছাড়া বর্তমানে কোনো জীবনবৃত্তান্তই ৬ থেকে ২০ সেকেন্ডের বেশি সময় আলোচনা বা গবেষণায় থাকে না!

সুতরাং জীবনবৃত্তান্তকে খুব বেশি বড় করা থেকে বিরত থাকুন। এটি যতটা সম্ভব ছোট রাখার চেষ্টা করুন। এমনভাবে এটিকে তৈরি করুন যাতে ঐ ১ পৃষ্ঠার জীবনবৃত্তান্ত যেনো আপনার ভবিষ্যত বসকে ইমপ্রেস করে ফেলার ক্ষমতা রাখে। আশা করি, আপনার হাতে থাকা যে কাজের পটভূমি, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে তা দেখানোর জন্য এই ১ পৃষ্ঠার জীবনবৃত্তান্তই যথেষ্ট হবে।

 

বানান বা ব্যাকরণের ত্রুটি এড়িয়ে চলুন

জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়ম হিসাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো এই বানান বা ব্যাকরণের ত্রুটি এড়িয়ে চলার ব্যাপারটি। সুতরাং বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে নিন৷ বর্তমান চাকরির বাজারে এমন অনেক নিয়োগকারী আছেন, যারা জীবনবৃত্তান্তে বানান বা ব্যাকরণের ত্রুটি দেখলে দ্বিতীয়বার আর জীবনবৃত্তান্তটি হাতে নিতে পছন্দ করে না।

এক্ষেত্রে এই ধরণের ত্রুটি এড়াতে আপনি কেবল আপনার জীবনবৃত্তান্তটি কয়েকবার না পড়ে অন্যকারো সাহায্যে প্রুফ রিডিং করতে পারেন। হতে পারে নিজের ভুলগুলি নিজের চোখে পড়ছে না বা ধরা যাচ্ছে না! এর পরিবর্তে হয়তো অন্যকারো সাহায্যে ভুলগুলি চোখে পড়তে পারে! সুতরাং অভিজ্ঞ কিংবা বানান বা ব্যাকরণের ব্যাপারে সিরিয়াস এমন কোনো ব্যাক্তির সাহায্য নিন। যদি তা সম্ভব না হয় তবে অন্য যেকোনো ভিন্ন সময়ে পুনরায় বৃত্তান্তটির প্রুফ রিডিং সেরে নিতে পারেন।

 

লজিক্যাল স্ট্রাকচারে ফরম্যাট করুন

আপনার জীবনবৃত্তান্তটি যৌক্তিক পদ্ধতিতে সাজানো মানেই হলো চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ বেড়ে যাওয়া। সুতরাং লজিক্যাল স্ট্রাকচারে ফরম্যাট করুন এবং সেই স্ট্র্যাকচারে জীবনবৃত্তান্তটি সাজিয়ে নিন। ক্যারিয়ারের পথে কোথায় আছেন এবং আপনি পরবর্তীতে কী করতে চান তার উপর মূলত স্ট্রাকচারটির ধরণ নির্ভর করবে৷

 

সহজে পড়া যায় এমনভাবে তৈরি করুন

জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়মের মাঝে কিন্তু লেখায় থাকা সাবলীলতাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করা মানেই নিয়োগকারীর মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হওয়া। যা পুরোপুরি ভুল ধারণা। কারণ অনেকসময় কঠিন শব্দের চাপে পড়ে অনেক কথাই বুঝতে গিয়ে হিমশিম খান নিয়োগকারীরা। যার ফলস্বরূপ জীবনবৃত্তান্তটিকে টেবিলের ডাস্টবিনে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

সুতরাং আপনার জীবনবৃত্তান্ত একটি পৃষ্ঠায় ফিট করার জন্য যেমন আপনাকে কম কথায় বেশি তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করতে হবে, তেমনি এতে থাকা সকল তথ্য এবং ত্বত্ত্বকে সহজ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি সবসময় ফন্টের সাইজ ১০ এর বেশি না বাড়ানোই শ্রেয়। আর যদি সহজ ভাষায় জীবনবৃত্তান্ত সাজানো কঠিন হয় সেক্ষেত্রে ন্যাচারাল বাক্যগুলির সাহায্য নিতে পারেন। যা সচরাচর ব্যবহৃত হয়, কিন্তু বেশ অর্থবহন করে!

 

রিসার্চবহুল এবং দৃশ্যত আকর্ষণীয় রাখুন

অনেকেই হয়তো বলতে পারেন, জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়মের ক্ষেত্রে আবার রিসার্চের গুরুত্ব নিয়ে কেনো কথা বলতে হবে! জীবনবৃত্তান্তে তো কেবল নিজের ক্যারিয়ার এবং যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার তথ্যই তুলে ধরা হয়! নিজেকে নিয়ে আবার রিসার্চের কি আছে! তবে মূল বিষয় হলো জীবনবৃত্তান্তের ফরম্যাট এবং নিজের মাঝে থাকা গুণগুলিকে খুঁজে বের করার প্রয়াস।

সুতরাং আপনি নিজের কাছে থাকা অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতাগুলি একে একে খুঁজে বের করুন। নিজেকে নিয়ে রিসার্চের পর বাড়তি আকর্ষণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে মনোযোগ দিন। লেখায় একের পর এক এমন অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা সাজিয়ে নিন যা কারো মাঝে থাকলে কোনো কোম্পানিই প্রার্থীকে ইগনোর করার সাহস করবে না। এই যেমন ধরুন ম্যানেজম্যান্ট স্কিল, লিডিং স্কিল, রাইটিং স্কিল, টেক রিলেটেড যেকোনো স্কিল, মার্কেটিং স্কিল, কাস্টমার কেয়ার স্কিল, কমিউনিকেশন স্কিল…!

 

সাবধানে আত্মপ্রশংসা করুন : জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়ম

দেখুন, চাকরির বাজারে যোগ্যতা থাকলে নিজের প্রশংসা করতে কোনো দোষ নেই। নতুবা আপনার আদৌ কোনো যোগ্যতা আছে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে থাকবে নিয়োগকারীরা। সুতরাং কম শব্দে গোছানোভাবে নিজের ঢোল নিজের পেটানোর চেষ্টা করুন। আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিন আপনি এই-সেই কাজে যথেষ্ট আগ্রহী এবং সে-সব কাজের জন্যে আপনি বেশ যোগ্যতার পরিচয় রাখেন।

মনে রাখবেন, আপনার জীবনবৃত্তান্ত আপনাকেই রিপ্রেজেন্ট করে। সুতরাং যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রে আপনার যোগ্যতাকে মাপকাঠিতে মাপতেই হবে! তবে মনে রাখবেন, আত্মপ্রশংসা করতে গিয়ে যেনো এমন কোনো অযৌক্তিক পয়েন্ট উল্লেখ করে না বসেন যা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়, অগ্রহণযোগ্য কিংবা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মোট কথা যতটা সম্ভব সত্যতার আলোকে চেষ্টা করুন নিজের ঢোল নিজে পিটিয়ে নিজের যোগ্যতাগুলিকে তুলে ধরতে।

 

ক্যারিয়ার সামারিটি ভালোভাবে সাজিয়ে নিন

জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করবো! অথচ ক্যারিয়ার সামারি নিয়ে আলোচনা করবো না… তা কি কখনো হয়? মূলত ক্যারিয়ার সামারিতে প্রার্থীর অতীত ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার কেমন দেখতে আগ্রহী সে-সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখ করা থাকে৷ যারা ইতিমধ্যেই একটি কিংবা তার বেশি কোম্পানিতে কাজ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ক্যারিয়ার সামারিটি হতে পারে বিশেষ সুযোগ।

অভিজ্ঞতার আলোকে ইতিমধ্যেই কোন কোন সেক্টরে কাজ করেছেন তা উল্লেখ করুন। যদি কোনো সেক্টরে এখনো পর্যন্ত কাজ না করে থাকেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই চেষ্টা করুন নিজের যোগ্যতার সাথে খাপ খায় এমনকিছু স্কিল সম্পর্কে বর্ণনা করার। পাশাপাশি এমন কোনো সেক্টর যদি থাকে যা নিয়ে আপনি শতভাগ কনফিডেন্সের সাথে কাজ করতে পারবেন বলে মনে করছেন, সেই সেক্টর সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য উল্লেখ করুন। যা আপনার চাকরি লাভের বিষয়টিকে আরো সহজ করে দেবে।

 

অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনোকিছু উল্লেখ করবেন না

জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়ম- দ্রুক চাকরি পেতে চাইলে জীবনবৃত্তান্তে কখনো অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনোকিছু উল্লেখ করবেন না। চেষ্টা করবেন জীবনবৃত্তান্তের যে টাইটেলটি রয়েছে তা যেনো মিডিয়াম আকারের হয়। আর যদি মিডিয়াম আকারের করতে না চান সেক্ষেত্রে ছোট আকারের টাইটেল ব্যবহার করতে পারবেন। তবে কখনো অতিরিক্ত বড় টাইটেল ব্যবহার করতে যাবেন না। এতে করে জীবনবৃত্তান্তটিকে শুরুতেই খাপছাড়া মনে হতে পারে।

আপনি যখন আপনার অভিজ্ঞতাগুলি তালিকাভুক্ত করবেন তখন যেনো অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা ঢুকে না যায় তা মাথায় রাখবেন। অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছাড়া অপ্রাসঙ্গিক এবং বাড়তি কোনো শব্দও উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। আপনার জীবনবৃত্তান্ত আপনাকে আপনার বড়াই করার সুযোগ দিলেও এতে থাকা অতিরিক্ত অপ্রাসঙ্গিক শব্দাবলি আপনাকে আরো ভোগাতে পারে। সুতরাং সবকিছু জেনে-বুঝে তবেই জীবনবৃত্তান্ত ক্রিয়েটিং বা এডিটিং শেষ করুন।

 

 

ইতি কথা : জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়ম

আশা করি জীবনবৃত্তান্ত লেখার নিয়ম সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলি শেয়ার করতে পেরেছি। আপনাদের যদি জীবনবৃত্তান্ত ফরমেট নিয়ে কনফিউশান কাজ করে সেক্ষেত্রে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। কারণ আমরা আপনার চাকরি লাভের মিশনকে সহজ করতে রেডিমেড জীবনবৃত্তান্তের ব্যবস্থা করবো। বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি ক্লিয়ার হতে এখানে ক্লিক করুন এবং জেনে নিন বিস্তারিত তথ্য। আশা করি কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।

Please follow and like us:
error20
fb-share-icon0
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *