আধুনিক সিভি লেখার নিয়ম | চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম
আজকাল চাকরির বাজার বড় না হলেও আবেদনকারীদের পরিমাণ বেড়েছে বহুগুণে। এই অতিরিক্ত পরিমাণের আবেদনকারীদের মাঝে নিজেকে প্রমাণ করার মাধ্যম হিসাবে চাই শুদ্ধ ফরম্যাটে সাজানো আধুনিক সিভি। যেই সিভি প্রাথমিকভাবে আপনার দক্ষতা, ব্যাক্তিত্ব এবং যোগ্যতাকে তুলে ধরবে। অনেকেই সারা বছর পড়াশোনা করতে করতেই পুরো শিক্ষাজীবনের ইতি টেনে ফেলেন। অথচ খেয়ালই থাকে না….চাকুরি সেক্টরেও কিছু কিছু যোগ্যতা রেডি থাকা চাই! তবে যারা শিক্ষাজীবনে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে সিভিজনিত প্যারায় ভুগছেন, আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক আধুনিক সিভি লেখার নিয়ম গুলি কি কি সে-সম্পর্কে।
সূচিপত্র
- সিভি কি?
- চাকরির জন্য সিভি লেখার অংশগুলি কি কি?
- শুদ্ধভাবে পুরো নাম
- একটি পরিষ্কার এবং প্রফেশনাল ছবি
- সুস্পষ্ট ক্যারিয়ার ওভারভিউ
- প্রয়োজনীয় কন্টাক্ট ইনফরমেশন
- আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা
- সামর্থ্য অনুযায়ী স্ট্রং পয়েন্ট
- অভিজ্ঞতা এবং স্কিল
- রেফারেন্স (যদি থাকে)
- চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়মগুলি কি কি?
সিভি কি?
মূলত কারিকুলাম ভিটাকে সংক্ষিপ্ত আকারে সিভি বলা হয়ে থাকে। এক একটি সিভি ২/৩ পেইজের হয়ে থাকে। এসব পেইজে ব্যাক্তির পরিচিতি, দক্ষতা, যোগ্যতাসহ অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা থাকে। আপনার সিভি দেখেই আপনার সম্পর্কে সম্যক ধারনা অর্জন করার ব্যাপারটি একজন চাকুরিদাতাকে নির্দিষ্ট পদে আপনি উপযুক্ত কিনা তা বুঝতে সাহায্য করে।
এক্ষেত্রে নিজেকে ভালোভাবে প্রমাণ করতে চাইলে অবশ্যই আপনার সকল তথ্য সিভিতে উপস্থাপন করতে হবে সঠিকভাবে এবং সম্পূর্ণরূপে। নতুবা একটি অগোছালো সিভি আপনাকে সাধারণ বাছাইপর্ব থেকেই ছিটকে পড়তে বাধ্য করবে। আজকাল যারা চাকুরি দিচ্ছেন বা লোকবল নিয়োগ দিচ্ছেন তাদের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই সিভি দেখেই প্রাথমিক বাছাইপর্ব সেরে ফেলে। আর এই প্রাথমিক বাছাইপর্বকে বলা হয় প্রথম কিংবা প্রাথমিক শর্ট লিস্ট। সুতরাং এই শর্ট লিষ্ট থেকে ছিটকে না পড়তে চাইলে এক্ষুণি জেনে নিন চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়মগুলি কি কি হতে পারে সে-সম্পর্কে।
চাকরির জন্য সিভি লেখার অংশগুলি কি কি?
শুরুতেই বলেছি এক একটি সিভি হবে ২/৩ পৃষ্ঠার। যদিও দক্ষতা একেবারেই না থাকলে সেক্ষেত্রে পৃষ্ঠার পরিমাণ আরো কমও হতে পারে। তবে আশা করি নিজের স্কিল ডেভলপ না করে কেউ ঝুঁকিপূর্ণ এবং একই সাথে উচ্চমাত্রার মর্যাদাসম্পন্ন কোনো পদে আবেদন করবে না! যাইহোক! ২/৩ পৃষ্ঠার সিভিতে বেশি পয়েন্ট অনুযায়ী আপনাকে নিজের জীবনকে সাজিয়ে নিতে হবে। চলুন তবে দেখা যাক একটি সিভিতে ঠিক কোন কোন অংশগুলির ব্যাপারে উদাসীন থাকা চলবে না:
শুদ্ধভাবে পুরো নাম: চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম
সিভির শুরুতেই আপনার সম্পূর্ণ নাম শুদ্ধভাবে লিখতে হবে। যেকোনো মানুষের ক্ষেত্রেই নাম সর্বপ্রথম আমলে আনার মতো পরিচায়ক। হোক সে চাকুরির আবেদনকারী…! সুতরাং শুরুতে নিজের নামটি পুরোপুরি শুদ্ধভাবে দিন। এক্ষেত্রে যদি বাংলায় সিভি সাজান সেক্ষেত্রে বাংলায় নামটি বসিয়ে নিন। অন্যদিকে যদি কেবল ইংরেজিতেই সিভি সাজান সেক্ষেত্রে ইংরেজিতেই নাম লিখুন। তবে কোনোভাবেই সিভির উপর বাংলা, ইংরেজির জগাখিচুরি বানানো যাবে না।
একটি পরিষ্কার এবং প্রফেশনাল ছবি: চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম
সিভির আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আপনার প্রফেশনাল ছবি। চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়মের মাঝে নিজের একটি পরিষ্কার এবং রঙিন ছবি বাছাই করে নেওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং পুরো সিভিটাকে এক দেখাতেই প্রফেশনাল মনে হয়। তবে যারা ছবি যুক্ত করার পক্ষে নন তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে পারেন। সম্ভব হলে এড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য এবং যুক্তিযুক্ত কারণ মেনশন করে দিতে পারেন।
সুস্পষ্ট ক্যারিয়ার ওভারভিউ: চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম
এখানে ক্যারিয়ার ওভারভিউ বলতে নিজের পুরো ক্যারিয়ারটাকে গুছিয়ে ছোট আকারে উপস্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। আপনার ক্যারিয়ারে কোন সেক্টরটি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে, ক্যারিয়ারে কোন সেক্টরে ফোকাস করতে চান, ইতিমধ্যেই যদি ক্যারিয়ার দাঁড় করাতে পারেন তবে তা কো সেক্টরে…সবকিছুই এই অংশে থাকবে। সুতরাং ঠান্ডায় মাথায় বসে ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলি নোট করে নিন। সবগুলিকে একের পর এক সাজিয়ে যথেষ্ট কম শব্দে মূল কথা উপস্থাপন করার চেষ্টা করুন। পূর্ব থেকেই বিষয়টি রেডি করা থাকলে সিভিতে তা এড করতে খুব একটা ঝামেলা হবে না।
প্রয়োজনীয় কন্টাক্ট ইনফরমেশন
কন্টাক্ট ইনফরমেশন হিসাবে যেকোনো সিভিতে পুরো নাম, প্রফেশনাল টাইটেল, ইমেইল, মোবাইল নাম্বার, লিঙ্কডইন এবং হোম অ্যাড্রেস সঠিকভাবে সাজিয়ে লেখাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্যারা বা পয়েন্টটি চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়মের ক্ষেত্রে যথেষ্ট কাজে আসে। বিশেষ করে বাছাইপর্ব পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ করবার প্রয়োজন পড়লে কিংবা একই কোম্পানির অন্য কোনো ভালো পদের জন্যে রিকমেন্ড করতে চাইলে কন্টাক্ট ডিটেইলস থাকাটা জরুরি।
আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা: চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম
চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম হিসেবে যে অংশটি যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন সে-অংশটি হলো শিক্ষাগত যোগ্যতা। যেকোনো জবে বর্তমানে স্কিলকো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে দিনশেষে জবে এপ্লাই করার পূর্বেই দরকার পড়ে এই শিক্ষারত যোগ্যতার। সুতরাং সিভিতে অবশ্যই আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য থাকতে হবে৷ ডিগ্রির সাল, তারপর ডিগ্রির নাম, বিষয় এবং প্রতিষ্ঠানের নাম…এভাবে সাজিয়ে প্যারাটিতে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারলে সিভিটিকে যথেষ্ট ডায়নামাইট সিভি মনে হবে!
সামর্থ্য অনুযায়ী স্ট্রং পয়েন্ট
এখানে একটি বিষয় ক্লিয়ার করা জরুরি। সেটি হলো আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী স্ট্রং পয়েন্টগুলি সাজানো বা লেখা মানেই এই না যে আপনার যোগ্যতা বা দক্ষতাগুলিকে একে একে তুলে ধরা! যদিও এই পয়েন্টটি হবে একধরণের যোগ্যতা-ভিত্তিক সামারি। এক্ষেত্রে আপনি যে জবের জন্য এপ্লাই করছেন সেই জবের সাথে মিলে যাওয়া দক্ষতাগুলিকেই কেবল সাজিয়ে লিখতে হবে। যেমন ধরুণ আপনার ভালো টাইম ম্যানেজম্যান্ট স্কিল রয়েছে, একটি টিমকে লিড দিতে আপনি যথেষ্ট দক্ষ, যেকোনো কাজ প্ল্যানিং অনুযায়ী করতে পারেন…এ-সমস্ত তথ্য শুধু পয়েন্ট আকারে সাজিয়ে নিতে হবে।
অভিজ্ঞতা এবং স্কিল: চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম
এবারের অংশে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা এবং স্কিল সম্পর্কিত তথ্য ক্লিয়ার করতে হবে। চেষ্টা করবেন আপনি যে জবের জন্যে এপ্লাই করছেন ঠিক সেই জবের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে। তবে যদি একই সেক্টরে আপনি আগে কখনোই জব না করে থাকেন সেক্ষেত্রে বিষয়টিকে অন্যভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবেন। কিছুটা মিলে বা একেবারেই মিলে না… তবে জবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লেখার চেষ্টা করুন। অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত প্যারার নিচেই নিজের স্কিল সম্পর্কিত পয়েন্ট সাজানোর চেষ্টা করুন। জবটির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এমন কোন কোন স্কিল আপনার রয়েছে তা সাজিয়ে নিন৷
রেফারেন্স (যদি থাকে): চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম
আপনি যদি মাল্টিন্যাশনাল কোনো কোম্পানিতে জবের জন্যে এপ্লাই করেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে রেফারেন্সের গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এসব কোম্পানিতে প্রতিযোগিতা বেশি থাকায় রেফারেন্সকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়। সুতরাং রেফারেন্সের নাম, ঠিকানা, পদবি, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি সঠিকভাবে সাজিয়ে নিন। তবে যদি আপনার কোনো রেফারেন্স ইনফো না থাকে সেক্ষেত্রে বিষয়টিকে স্কিপ করতে পারেন।
চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়মগুলি কি কি?
এবারে চলুন চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানা যাক! জানা যাক এ-সম্পর্কিত বেশকিছু কার্যকর টিপস সম্পর্কে:
- ইংরেজি ভাষায় সিভি সাজানোর চেষ্টা করুন
- কাগজের সাইজ অবশ্যই A4 রাখার চেষ্টা করুন
- ফন্ট হিসাবে Times New Roman ফন্ট বেছে নিতে পারেন
- সাধারণ লেখার ফন্ট সাইজ ১০-১২ এর বেশি করবেন না
- H1, H2 ইত্যাদি ট্যাগ ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় হ্যাডিং যোগ করুন
- লেখার বিভিন্ন অংশের গুরুত্ব বুঝাতে লেখা বোল্ড রাখুন
- বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করতে ভুলবেন না
- মনে রাখবেন, ২/৩ পেইজের এক একটি সিভি ব্যাক্তির সকল তথ্য তুলে ধরতে সক্ষম
- সিভি লেখা শেষ হলে তা ভালোভাবে প্রুফ রিডিং করে নিন
- ইমেইল পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রফেশনালিজম ধরে রাখতে পিডিএফ ফাইলকে গুরুত্ব দিন
ইতি কথা
আশা করি উল্লেখিত আধুনিক সিভি লেখার নিয়মগুলি ফলো করতে পারলে আপনার সিভিটুকুও হয়ে উঠবে সফলতার অন্যতম সিঁড়ি৷ সুতরাং আজ থেকে বড় ভাইয়ের দেয়া সিভি কপি করার অভ্যাস পরিবর্তন করুন। নিজেই নিজের সিভি তৈরি করুন! তাও আবার সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন সিভি! আশা করি অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে চাকরির বাজারে এসেও কেবলমাত্র সিভি তৈরির প্যারা আপনাকে আর ভোগাবে না।