নিয়োগকারী বা কোম্পানির এইচআর ম্যানেজারকে ইমেইল করার নিয়ম: চাকরির ইমেইল করার নিয়ম
কথায় বলা হয়ে থাকে, “আপনার প্রথম ছাপই হলো আপনার শেষ ছাপ”। নিয়োগকর্তার কাছে আপনার দক্ষতা এবং যোগ্যতা প্রমাণের ক্ষেত্রে এই বলা কথা বা প্রচলিত বাক্যটিও পুরোপুরি প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে চাকুরির আবেদনকারী হিসাবে আপনার নিয়োগকর্তার কাছে পৌঁছানোর একটি সহজ উপায় হতে পারে এই ইমেল করার বিষয়টি। যা পাঠাতে হবে সরাসরি নিয়োগকারী বা কোম্পানির এইচআর ম্যানেজারের কাছে এবং উক্ত মেইলটি হতে হবে প্রফেশনাল এবং সর্বোচ্চ কোয়ালিটিফুল। চলুন তবে আপনার কনফিউশান দূর করতে জেনে নেওয়া যাক নিয়োগকারী বা কোম্পানির এইচআর ম্যানেজারকে ইমেইল করার নিয়মসহ অন্যান্য টেকনিক।
সূচিপত্র
-
নিয়োগকারীকে সিভি মেইল করার কারণ
-
চাকরির সিভি নিয়োগকারী/কোম্পানির HR কে ইমেল করার নিয়ম
-
সাবজেক্ট-লাইন ব্যবহার করুন
-
ইমেইল বডি + CTA ঠিক রাখুন
-
ইমেইলকে সংক্ষিপ্ত রাখার চেষ্টা করুন
-
কমিউনিকেশন স্কিল কাজে লাগান
-
নিয়ম মেনে নিয়োগকারীকে মেইল করার ফল
নিয়োগকারীকে সিভি মেইল করার কারণ
মনে রাখবেন বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাঁটাইয়ের হার নিয়োগের হারের চেয়ে অনেক বেশি। এক একটি ভালো এবং কোয়ালিটিফুল চাকরি পেতে এখন মাসের পর মাস সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। এই কঠিন প্রতিযোগিতায় আপনাকে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই আপনার একটি নতুন পদ্ধতির প্রয়োজন। যা হতে পারে এই নিয়োগকারীকে সিভি মেইল করার করার বিষয়টি।
তবে এক্ষেত্রে মেইল করার পূর্বে নিয়োগকারী বা কোম্পানির এইচআর ম্যানেজারকে ইমেইল করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। এমনভাবে সিভি এবং মেইল বডি সাজাতে হবে যাতে নিয়োগকারী আপনার প্রোফাইল বিবেচনা করার সুযোগ মোটেও হাতছাড়া করতে না চায়।
আর যারা কোম্পানির প্রোফাইল সম্পর্কে জানতে চান বা মেইল করবেন তা সম্পর্কে জানাতে চান তারা মূলত দু’টি উপায় ফলো করতে পারেন। এগুলি হলো:
- LinkedIn এর মত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তাদের উপস্থিতি বা কার্যক্রম চেক করে নিশ্চিত হতে পারেন
- নিয়োগকারীকে সরাসরি জানান যে আপনি তাদের মেইল করতে চান
উপরের দু’টো টেকনিক একসাথে ফলো করার কারণে বা যেকোনো একটি ফলো করার কারণে আপনি যদি কোম্পানির চোখে পড়েন বা তাদের মেইল করার ব্যাপারটি যদি নিশ্চিত করাতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনি অন্য আবেদনকারীদের থেকে এগিয়ে থাকতে পারবেন। যা আপনাকে অন্যান্য নিয়োগকারীদের চাইতে অনেক এগিয়ে রাখবে।
চাকরির সিভি নিয়োগকারী/কোম্পানির HR কে ইমেল করার নিয়ম
মনে রাখবেন যেকোন ইমেইলের তিনটি দিক আছে। এগুলি হলো সাবজেক্ট লাইন, ইমেইল বডি এবং CTA বা কল টু অ্যাকশন। নিয়োগকারীকে আপনার ইমেল খুলতে সাহায্য করবে এই সাবজেক্ট লাইন এবং মেইলের অন্যান্য অংশ সাহায্য করবে পুরো মেইলটি অপরপ্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছাতে। চলুন তবে এবারে জেনে নেওয়া যাক চাকরির সিভি নিয়োগকারী/কোম্পানির HR কে ইমেল করার নিয়ম সম্পর্কিত গাইডলাইন।
সাবজেক্ট-লাইন ব্যবহার করুন: চাকরির ইমেইল করার নিয়ম
আপনি কি জানেন শতকরা ৬৪ জন মেইল ব্যবহারকারী মেইল ওপেন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে শুধুমাত্র সাবজেক্ট লাইনের টপিকের উপর নির্ভর করে? এছাড়াও যদি আপনি কোনো মেইলে পুরোপুরি অনুপযুক্ত সাবজেক্ট লাইন ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে আপনার ইমেলকে স্প্যাম ফোল্ডারেও চলে যেতে পারে। সুতরাং নিয়োগকারীকে আপনার সিভি ইমেল করার সময় আপনার সাবজেক্ট লাইনটিতে বাড়তি মনোযোগ দিন।
চাকরির পোস্টের মেইন কিওয়ার্ডের সাথে সাবজেক্ট লাইনের টপিকটির মিল রাখার চেষ্টা করুন। যতটা সম্ভব সাবজেক্ট লাইনকে পরিষ্কার রাখুন। অভিনব শব্দ, দীর্ঘ বাক্য, বা অস্পষ্ট কোনো বিষয় সাবজেক্ট টপিকে রাখবেন না। এই যেমন ধরুন, আপনি দিতে পারেন, “আইটি ম্যানেজার পদের জন্য আবেদন”, “কলেজ শিক্ষক পদের জন্য আবেদন” বা “অমুক পদের জন্য আবেদন”! মনে রাখবেন এই ধরণের সাবজেক্ট লাইন প্রমাণ করবে যে, আপনি কোনো স্প্যামার নন।
ইমেইল বডি + CTA ঠিক রাখুন: চাকরির ইমেইল করার নিয়ম
সাবজেক্ট লাইন ঠিক রেখে আপনি যদি কোনোভাবে নিয়োগকারীকে আপনার মেইলে প্রবেশ করাতে পারেন তাহলে অর্ধেক কাজ কিন্তু শেষ। তবে পুরোপুরি না। পুরো কাজটা শেষ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে ইমেইল বডি + CTA এর উপর জোর দিতে হবে। নিয়োগকারী যেনো আপনার সিভি চেক করাকে সঠিক মনে করে তা আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে। ইমেইল বডিকে নিয়োগকারী চোখে পড়াতে যেসব বিষয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিবেন সে-সব বিষয় হলো:
ইমেইলকে সংক্ষিপ্ত রাখার চেষ্টা করুন: চাকরির ইমেইল করার নিয়ম
এখানে সংক্ষিপ্ত রাখার “চেষ্টা করার” কথা বলেছি। অর্থ্যাৎ প্রয়োজনে আপনি বড় করতে পারবেন। কারণ প্রয়োজনীয় তথ্য না দিয়ে অনেক বেশি সংক্ষিপ্ত করে ফেলাটা বোকামি হবে। যাইহোক…ইমেইল বডিটিকে সাজাতে যতটা সম্ভব প্রফেশনাল, সংক্ষিপ্ত, এবং পরিষ্কার টোন ব্যবহার করুন। মেইলকে সংক্ষিপ্ত রাখতে টু-দ্য-পয়েন্টে কথা বলুন এবং বাড়তি কথাবার্তা এড়িয়ে চলুন। কয়েকটি লাইনে একইসাথে আপনার যোগ্যতা, দক্ষতা এবং আগ্রহের বিষয়গুলি তুলে ধরুন৷
কমিউনিকেশন স্কিল কাজে লাগান: চাকরির ইমেইল করার নিয়ম
নিয়োগকারীকে তাদের প্রথম নাম দ্বারা সম্বোধন করে আপনার ইমেলটি কমিউনিকেশনের অন্যতম উপায় হিসাবে তৈরি করুন। আপনি কেন তাদের জন্য কাজ করতে চান তা সংক্ষিপ্ত আকারে শেয়ার করুন। সম্ভব হলে অল্প কথায় আপনি কীভাবে তাদের সম্পর্কে জানতে পেরেছেন তাও উল্লেখ করুন। সেই সাথে কভার লেটার, পোর্টফোলিও ইত্যাদি ডকুমেন্টস যে এটাচ ফাইল হিসাবে এড করা আছে সেটিও জানিয়ে দিন।
নিয়ম মেনে নিয়োগকারীকে মেইল করার ফল
আপনি যদি নিয়ম মেনে নিয়োগকারীকে মেইল করতে পারেন, তাহলে কম্পিটিটরদের চাইতে আপনার এগিয়ে থাকা সহজ হবে। আর উপরোক্ত নিয়ম মেনে আপনি যদি ইমেইল লেখেন তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। কারণ এভাবে মেইল লিখতে পারলে এটি পড়তে নিয়োগকারীর মাত্র এক মিনিটের মতো সময় লাগবে। মেইলের সেকেন্ড পার্টে আপনি যে দক্ষতাগুলি ব্যবহার করেছেন সেটিও নিয়োগকারীর চোখে পড়াটা সহজ হবে।
প্রো টিপস হিসাবে বলে রাখি, মেইল বডি সাজানোর সময় বোল্ড করা, হেডিং সেট করা, ফন্ট ব্যবহার করা, লিংক এড করার মতো গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক কাজে লাগাতে পারেন। এছাড়াও নিয়োগকারীরা প্রায়ই ইমেলের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছে পৌঁছান। সেক্ষেত্রে আপনার কাছে কোনো মেইল আসলে সেই মেইলটির ফিরতি ম্যাসেজ বা রেসপন্স করার চেষ্টা করুন। এতে করে সৌজন্যতা বাড়বে।
ইতি কথা
মনে রাখবেন, চাকরির সুযোগ সরাসরি আপনার মেইলবক্সে নেমে আসার এই মাহিন্দ্রক্ষণকে কাজে লাগানোটা জরুরি। আপনি আগ্রহী না হলে বিনয়ীভাবে তা প্রত্যাখ্যান করুন। তবে আগ্রহী হলে অবশ্যই উপরোক্ত টিপসগুলি ফলো করার চেষ্টা করুন। যারা পোর্টেবল সম্ভাব্য সব চাকরিতে আবেদন করার পরও কিছুই করতে পারছেন না তারা উপরোক্ত টেকনিক মেনে মেইল করতে পারেন। আশা করি চাকরিটি এবারে হয়েই যাবে!
আপনাদের যদি জীবনবৃত্তান্ত ফরমেট নিয়ে কনফিউশান কাজ করে সেক্ষেত্রে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। কারণ আমরা আপনার চাকরি লাভের মিশনকে সহজ করতে রেডিমেড জীবনবৃত্তান্তের ব্যবস্থা করবো। বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি ক্লিয়ার হতে এখানে ক্লিক করুন এবং জেনে নিন বিস্তারিত তথ্য। আশা করি কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।